ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন প্রয়োজন ও ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার
ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন এ বিষয়ে এগুলো সম্পর্কে কি আপনি জানতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। ফ্রিল্যান্সিং কি এই প্রশ্নটি একটি বেসিক প্রশ্ন যা একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিভিন্ন নিউজফিডে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে বিভিন্ন খবর শুনে থাকি। যা থেকেই হয়তো আপনি কোন এক সময় ফ্রিল্যান্সিং শব্দ বা নামটি শুনে থাকবেন। যদিও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি অনেক জটিল কিন্তু আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা সকল বিষয়গুলো সহজ করে বোঝানোর চেষ্টা করব।
এটি একটি বিশাল সেক্টর যার অধীনে লক্ষ লক্ষ ক্যাটাগরি রয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু একজন বিগিনার বা নতুন ফ্রিল্যান্সারের ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন এ বিষয়গুলো জানা উচিত তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা সকল বিষয়বস্তু আপনাদের মাঝে তুলে ধরব। উক্ত বিষয়টি বাদে আপনারা আরও যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হল ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার এবং ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা কি কি। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন, পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি এ সকল বিষয়গুলো জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের প্রত্যেকটি অংশ মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন।
পোস্ট সূচিপত্র
ফ্রিল্যান্সিং অর্থ কি
ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ যদি সরাসরি ভাবে বলতে হয় সেটি হবে ফ্রিল্যান্সিং একটি “মুক্ত পেশা”। সাধারণত আমরা চাকরি আর ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হিসেবে তুলে ধরি এর সময়ের ভিত্তিতে। আপনি যদি কোন অফিসে চাকুরীরত হয়ে থাকেন তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে প্রবেশ করতে হয় এবং নির্দিষ্ট একটি সময় পর সেখান থেকে আপনি ছুটি পেয়ে যান। কিন্তু আপনি যখন একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করবেন তখন আপনার সেখানে কোন রকম ধরা বাধা নিয়ম থাকবে না। আপনার খেয়াল খুশিমতো সময় মেইনটেইন করে বায়ারের কাজ সম্পূর্ণ করে সেটি জমা দিলেই হয়ে গেল।
আর এজন্যই এ বিষয়টিকে স্বাধীন পেশার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। চাকরিতে সাধারণত সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত আপনাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করলে আপনি ঘরে বসেই নিজের খেয়ালখুশিমত কাজগুলো করতে পারছেন। ফ্রিল্যান্সিং শব্দটিকে আরো সহজভাবে যদি বর্ণনা করা হয় সেক্ষেত্রে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে টাকা ইনকাম করার বিষয়টিকে বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে অনলাইন থেকে যেসকল কাজ পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে যদি অর্থ ইনকাম করা হয় সেই পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং।
কোন নির্দিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কাজ না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিভিত্তিক কাজ করার বিষয়টিকে ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন আয় করা বলা হয়। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে প্রাচীনকাল থেকেই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টির ধারণা সমাজে প্রচলিত ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশের ফলে এই শব্দটি আলাদা একটি তাৎপর্যতা লাভ করেছে। ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন এ বিষয়টি একজন বিগিনার বা নতুন ফ্রিল্যান্সারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের নিউজ চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে যেভাবে ফলাও করে ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ টাকা ইনকাম করার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
এতে করে সবার মাঝে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার হয়ে থাকে এই বিষয়গুলো ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে। যদিও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি বর্তমান সময়ে সমাজে একটি পজিটিভ ধারণা সৃষ্টি করেছে। চুক্তিভিত্তিক কাজ করার কারণে এই পেশায় কোন বস থাকে না। নিজেই নিজের বস যার প্রেক্ষিতে ক্লায়েন্টের কাজ করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সিং করে দেশের বাহিরে থেকে ডলার ইনকাম করার সুযোগ থাকে যা দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার
ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার এটা আসলে নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। ফ্রিল্যান্সিং একটি শব্দ হলেও এর সঙ্গে জুড়ে আছে অনেক অনেক বিষয়। বর্তমান সময়ে মার্কেটপ্লেসগুলোতে যদি আপনি খোঁজাখুঁজি করেন সে ক্ষেত্রে দেখবেন হাজার খানেক ক্যাটাগরি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরটি গঠিত। শুধুমাত্র ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতায় কতগুলো যে কাজের সুযোগ রয়েছে তা আপনি ধারণা করতে পারবেন না। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং আসলে কত প্রকার হবে সেটি আসলে বলা মুশকিল। তবে আমরা ইনকামের উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্সিংকে ২ ভাগে বিভক্ত করতে পারি। প্রথমটি হল একটিভ ইনকাম (Active Income) এবং দ্বিতীয়টি হল প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income)।
একটিভ ইনকাম (Active Income)
ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন এ বিষয়টি যেমন জানা জরুরী ঠিক তেমনি একজন প্রাথমিক অবস্থায় বিগিনার ফ্রিল্যান্সারের ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার হয়ে থাকে সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়া উচিত। ফ্রিল্যান্সিং জগতের একটিভ ইনকাম করার বিষয়গুলো সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে বায়ার থেকে কাজের অর্ডার নেওয়ার বিষয়টিকে বলা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনে কোর্স করলেন এবং কোর্স করার পরে ফাইবার মার্কেটপ্লেসে একটি অ্যাকাউন্ট খুললেন। একাউন্ট খোলার পরে অবশ্যই আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে একটিভ থাকতে হবে।
অর্থাৎ কম্পিউটার অন থাকবে আপনার মার্কেটপ্লেসের অ্যাকাউন্টও অন থাকবে এবং পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর রিফ্রেস করতে হবে। পাশাপাশি নিজেকে এজন্যই অনলাইনে একটিভ রাখতে হবে যেন বায়ার আপনাকে মেসেজ করলে আপনার সাথে কমিউনিকেশন করতে পারে। যেহেতু এই প্রসেসটি করার জন্য আপনাকে সবসময় সজাগ এবং একটিভ থাকতে হচ্ছে এজন্যই আমরা প্রকারভেদ অনুসারে এ বিষয়গুলোকে একটিভ ইনকাম এর সঙ্গে তুলনা করেছি।
প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income)
প্যাসিভ ইনকাম সে বিষয়টিকে বলা হচ্ছে যেখানে আপনাকে সবসময় একটিভ থাকতে হয় না। উপরের একটিভ ইনকাম এর উদাহরণে আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স করেন এবং এরপরে একটি নির্দিষ্ট মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। পাশাপাশি সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে একটিভ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে কিন্তু কাজের অর্ডার পাবেন। কিন্তু প্যাসিভ ইনকামের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আলাদা। কিন্তু এটাও ফ্রিল্যান্সিং এর আওতায় ধরা হয়। প্যাসিভ ইনকাম এর মধ্যে রয়েছে ইউটিউব, ফেসবুক ভিডিও আপলোড, ব্লগ ওয়েবসাইট, ডিজিটাল প্রোডাক্ট সেল,
বিভিন্ন কোর্স বিক্রি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সকল কিছুই প্যাসিভ ইনকামের অন্তর্গত। ধরুন আপনি ইউটিউবে যদি নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন এবং সেখান থেকে ইনকাম করে থাকেন। তাহলে ইউটিউব প্লাটফর্মটিতে আপনাকে সব সময় একটিভ থাকতে হয় না। ভিডিও আপলোড করার পরে ভিউ অনুসারে অটোমেটিক আপনার গুগল এডসেন্সে টাকা জমতে থাকে। ঠিক তেমনি আপনার যদি ব্লগ ওয়েবসাইট থাকে সেখান থেকেও আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন এবং সেখানেও আপনাকে সবসময় একটিভ থাকতে হবে না। আপনি এই মুহূর্তে যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন এটিও একটি প্যাসিভ ইনকাম এর একটি অংশ।
ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন
আমরা ইতিমধ্যে ফ্রিল্যান্সিং কি এ বিষয়টি সম্পর্কে মোটামুটি অবগত হতে পেরেছি। আপাতত এতটুকু বুঝতে পেরেছেন যে ফ্রিল্যান্সিং হল একটি পেশা যা স্বাধীনচেতা হিসেবে আপনি প্রতিনিয়ত কাজ করতে পারবেন। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টিকে অনলাইন ইনকামের সঙ্গে এজন্যই তুলনা করা হচ্ছে, কারণ আপনার ইনকাম গুলো অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে আয় করা যাবে। আজকাল ফেসবুক এবং youtube এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার শব্দটি আমরা খুব ভালোভাবেই শুনে থাকি। যেহেতু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে অনলাইন ভিত্তিক সকল কিছু পরিচালিত হচ্ছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতেই কিন্তু ফ্রিল্যান্সারা বিভিন্ন কাজের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। দেশে এবং বিদেশে আজকাল প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক কাজগুলো সাধারণত অনলাইনে পরিচালিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রিল্যান্সার এর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে যেমন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার প্রসার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কম খরচে বিভিন্ন প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন তৈরি করা থেকে শুরু করে প্রচার সকল কিছু করতে পারছেন। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সার রাও ঘরে বসে খুব সহজে সেখান থেকে নিজেদের ইনকাম করতে পারছেন। এতে করে যেমন কাজের গতি বৃদ্ধি হয় ঠিক তেমনি সময়ও বাঁচানো যায়।
অনলাইনে যে ধরনের কাজ পাওয়া যায় সেগুলো প্র্যাকটিক্যাল লাইফ থেকে একটু ভিন্ন হতে পারে। এই কারণে সেগুলো করতে আমাদের নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করা জরুরী। প্র্যাকটিকাল লাইফে আমরা যে ধরনের কাজ করে থাকি অনলাইন জগতে যখন আপনি সেগুলো করবেন সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে করতে হবে। অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে ইনকাম করার জন্য বা ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করার জন্য আপনাকে যে ধরনের কাজ শিখতে হবে সেগুলো হল ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট,
ডিজিটাল মার্কেটিং, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের কাজ শেখার পরে আপনার ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রফেশনাল মানে একাউন্ট খুলতে হবে এবং সেখান থেকেই আপনি বায়ারের মাধ্যমে কাজের অর্ডার পাবেন। আর এজন্যই আপনাদেরকে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন করা উচিত এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। চলুন এবার আমরা জেনে নিব ফ্রিল্যান্সিং কেন করা উচিত এ বিষয়ে সম্পর্কে।
ফ্রিল্যান্সিং কেন করবেন?
আমরা আর্টিকেলের শুরুতেই বলেছিলাম যে ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি শুনতে সহজ মনে হলেও এর শাখা প্রশাখা অনুযায়ী অনেক কঠিন একটি বিষয়। আবার ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার হয়ে থাকে এই বিষয়টি জানার পাশাপাশি আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং করতে ইচ্ছুক। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কমপক্ষে ৬ মাস লাগবে যে কোন একটি বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে। ফ্রিল্যান্সিং যেমন কঠিন একটি বিষয় ঠিক তেমনি এর ইনকাম ও অনেক বেশি। আপনি যদি কোন একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে তার সফলতার গল্প শুনেন তাহলে বুঝবেন কতটা কঠিন পথ তিনি পাড়ি দিয়ে এসেছেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল ফ্রিল্যান্সারদের গল্পগুলো আনন্দমুখর হয় না। সেখানে থাকে ব্যর্থতা এবং স্ট্রাগল এর গল্প। রাতের পর রাত জেগে কাজ শেখা, ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখা থেকে শুরু করে কাজ প্র্যাকটিস করে ইনকাম করা পর্যন্ত যাওয়া। এ সকল কিছু থাকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্পে। তাহলে এত এত কঠিন পথ পাড়ি দিয়েও কেন আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন এ বিষয়টি অবশ্যই আপনাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। আসুন বিষয়গুলো একটু পরিষ্কার ভাবে জেনে নেওয়া যাক। ধরুন আপনি অনার্সের কোন একটি সাবজেক্ট এ পড়াশোনা করছেন।
নির্দিষ্ট একটি সময় পড়ে যখন আপনার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে তখন চাকরির খোঁজ করতে হবে। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকরি পাওয়াটা যে কতটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনার যদি পড়াশোনা শেষ করতে সময় লাগে ২০ বছর, এরপরে যখন আপনি একজন ফ্রেশার হিসেবে এপ্লাই করবেন তখন আপনার স্যালারি হবে মাত্র ১০ হাজার টাকা। যা দিয়ে সংসার চালানো মোটেই সম্ভব হয় না। দেখবেন এই জবগুলো পাওয়ার জন্যেও আপনি কতবার রিজেক্ট হয়েছেন। এইবার আসুন ফ্রিল্যান্সিং এর বিষয়ে।
আপনি যদি একবার ফ্রিল্যান্সিং জগতে সাকসেসফুল হতে পারেন তাহলে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। অনেকে আছে যারা নিজেদের এজেন্সি খুলেছে এবং সেখান থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে। চলুন ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন এই বিষয়গুলোকে পয়েন্ট আকারে জেনে নেওয়া যাক।
- ফ্রিল্যান্সিং করার অন্যতম একটি কারণ হলো এখানে ধরা বাধা কোন নিয়ম-কানুন থাকে না এবং আপনি স্বাধীনভাবে কাজগুলো করতে পারবেন।
- অন্যান্য চাকরি করার জন্য আপনাকে যেমন ইন্টারভিউ দিতে হয় পাশাপাশি প্রয়োজন হয় উচ্চমানের ডিগ্রির।
- কিন্তু আপনি যদি শুধুমাত্র বেসিক কম্পিউটার চালনা জানেন এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তাহলেই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে উন্নতি করতে পারবেন।
- আপনি খেয়াল করলে দেখবেন প্রাইভেট সেক্টরে যারা জব করে প্রমোশন পাওয়ার জন্য রাত দিন পরিশ্রম করেও শেষমেষ আর প্রমোশন পাওয়া হয় না।
- কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যদি আপনি আপনার মেধা, পরিশ্রম এবং ধৈর্যকে কাজে লাগান সে ক্ষেত্রে প্রমোশনের দরকার হবে না। আপনার মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইল গুলো দিন দিন রেংকে চলে যাবে এবং আপনার কাছে আসবে লক্ষ লক্ষ টাকার অর্ডার।
- যারা জব করছে তারা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটি স্যালারির উপর ডিপেন্ডেন্ট থাকে। কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সার কখনোই মাসিক স্যালারির উপর ডিপেন্ডেন্ট হয় না।
- বেসরকারি আইটি ফার্মের একজন কর্মকর্তা চাইলেই তার সুবিধা অনুযায়ী ছুটি গ্রহণ করতে পারবেনা। আপনি চাইলেই যে কোন মুহূর্তে আপনার সাথে ল্যাপটপটি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন আপনার ছুটিতে।
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা কি কি
যারা নতুনভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন এ বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা সমন্ধে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। কেননা ফ্রিল্যান্সিং কেন করবেন এই প্রশ্নে আমরা যে সকল তথ্যগুলো তুলে ধরেছি সেগুলোই মূলত সুবিধা গুলোর অনুরূপ। এর কারণ হলো যেখানে সুবিধা থাকবে মানুষ সেখানেই কাজগুলো করে মজা পাবে। পাশাপাশি সুবিধার সাথেই কিন্তু কাজগুলো করা উচিত বলে আমরা মনে করি। যদি বিষয়টিতে কোনরকম সুবিধা না থাকতো তাহলে কিন্তু আমরা কখনোই ফ্রিল্যান্সিং করার সাজেস্ট আপনাদেরকে করতাম না।
তবে ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা, ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার সেটির উপর নির্ভর করতে পারে। চলুন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কেন করা উচিত এবং কি কি সুবিধার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আসা উচিত সে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব।
- সর্বপ্রথমে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম যে সময়ের স্বাধীনতা। এখানে কোনরকম ধরা বাধা নিয়ম কানুন বা সময় বেঁধে থাকা থাকেনা।
- নিজের খেয়ালখুশি মতো সময়ে মেনটেন করে কাজ করা যায়। নিজের সময়টিকে কাজে লাগিয়ে আপনি বায়ারের কাজ শেষ করে জমা দিলেই হয়ে গেল।
- যেখানে বেসরকারি কোন অফিসে কাজ করলে বেতন অফিস কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আপনি নিজেই নিজের বেতন ঠিক করতে পারবেন।
- একজন কর্মকর্তা যেখানে একটি অফিসে প্রতিনিয়ত কাজ করে। একজন ফ্রিল্যান্সার সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পায়।
- ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে দলগত কাজের সুযোগ রয়েছে। এককভাবে কাজ করার পাশাপাশি আপনি টিম নিয়েও বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাজ কমপ্লিট করতে পারবেন।
- অনেকেই আছে যারা পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে পড়াশোনার খরচ যোগানোর পাশাপাশি পারিবারিক খরচও মেটাতে পারছে।
- আপনার ইচ্ছেমত ওয়ার্ক স্টেশন বানিয়ে নিয়ে সেখানে নিজের মন মত কাজের পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন।
- ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন অফিসে যেতে হবে না। ঘরে বসে আপনার ক্লায়েন্টের সকল ধরনের কাজগুলো করতে পারবেন।
আশা করি এতগুলো সুযোগ-সুবিধা যদি কোন একটি বিষয় থাকে তাহলে সেখানে নিজের ক্যারিয়ার গড়া অবশ্যই একটি বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমরা মনে করি। তাহলে আপনি যদি একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার করা উচিত এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থাকে না। এ সকল বিষয়ে না ঘাবড়িয়ে নিজের দক্ষতাকে উন্নত করার চেষ্টা করুন।
একটি সময় দেখবেন আপনি ফাইবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস থেকে কাজের অর্ডার পাচ্ছেন। যদি ভালো মানের কাজ দিতে পারেন তাহলে সে সকল বায়ার আপনাকে পুনরায় হায়ার করবে। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং জগতে যদি ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে দক্ষতা অর্জন করা অন্যতম একটি বিষয়।
ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি
ফ্রিল্যান্সিং কি এবং ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার হয়ে থাকে এ বিষয়গুলো আমরা আর্টিকেলের উপরের অংশে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করেছি। ফ্রিল্যান্সিং এর প্রকারভেদ উল্লেখ করার সময় আমরা বলেছিলাম যে ভবিষ্যতে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি বিষয় ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে অনলাইন ভিত্তিক। শুধু ভবিষ্যতে নয় আপনি বর্তমানে লক্ষ্য করলে দেখবেন অফিস এর কাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সকল কাজ অনলাইন ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। সরকারি অনেক অফিস রয়েছে বর্তমানে তারা ডাটা এন্ট্রির কাজ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে করে থাকে।
যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব একটা না দেখা গেলেও বাহিরের কান্ট্রি গুলোতে ব্যাপক পরিমাণে এ ধরনের কাজ পাওয়া যায়। হতে পারে বাংলাদেশেও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে একসময় ফ্রিল্যান্সার হায়ার করা হবে। তাই এখন থেকে যদি আপনি একজন ডাটা এন্ট্রি হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান এবং ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার আরো উন্নত করতে চান। তাহলে ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ অবশ্যই ভালো বলে আমরা মনে করি। এটি শুধুমাত্র আমরা উদাহরণ হিসেবে আপনাদের মাঝে উল্লেখ করলাম। ঠিক এরকম ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যতগুলো কাজ রয়েছে সবগুলোর ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।
যদি আপনি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন পূর্বের তুলনায় বর্তমানে কি পরিমান অনলাইন বিজনেস এর পরিধি বিস্তার লাভ করেছে। ফেসবুকে ঢুকলেই আমরা দেখি বিভিন্ন প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন আমাদের সামনে শো করানো হচ্ছে। এগুলোই মূলত একজন ডিজিটাল মারকেটার অ্যাড ক্যাম্পেইন রান করানোর মাধ্যমেই আমাদের হোমপেজে নিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে অনলাইন বিজনেসের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সুতরাং আপনি যদি একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন করতে হবে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব একটা চিন্তা না করে আজ থেকেই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যে কোন একটি বিষয় নিয়ে আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। দেখবেন ভবিষ্যতে দুই এক বছরের মধ্যেই আপনি কোন পর্যায়ে চলে গেছেন।
ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল
ফ্রিল্যান্সিং কি এবং ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার হয়ে থাকে এই প্রশ্নগুলোর পাশাপাশি আরও একটি বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন হল ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে ফ্রিল্যান্সিং জগতে কয়েক হাজার কাজের সুযোগ থাকে। তবে অবশ্যই সে সকল কাজের মধ্যে কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো হারাম হিসেবে উপনীত হবে। যেমন ধরুন আপনি ওয়েব ডিজাইন বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেন। তাহলে আপনার কাছে যদি কোন ক্লায়েন্ট এসে পর্ন সাইট ক্রিয়েট এবং জুয়ার সাইডগুলো ক্রিয়েট করার কথা বলে এবং সেটি আপনি যদি ক্রিয়েট করে দেন।
তাহলে সেখান থেকে ইনকাম কৃত টাকাগুলো অবশ্যই আপনার হারাম হিসেবে গণ্য হবে। ঠিক তেমনি আপনি যদি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে থাকেন এবং আপনার কাছে এমন একজন ক্লায়েন্ট আসলো যার পণ্যগুলো হারাম। তাহলে আপনি যদি সেগুলো ফেল করে দেন এবং সেখান থেকে টাকা ইনকাম করেন তাহলে সেটিও আপনার জন্য হারাম হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু একজন ক্লায়েন্ট আসলো যার একটি ওয়েবসাইট দরকার যেখানে সে শুধুমাত্র হালাল প্রোডাক্ট সেল করবে। আপনি সেই ওয়েবসাইটটি তৈরি করে দিলেন এবং সেখান থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করলেন।
তাহলে সেটি আপনার জন্য অবশ্যই হালাল হিসেবে গণ্য হবে। ঠিক তেমনি একজন ব্যবসায়ীর তার পোশাকের বিজনেস রয়েছে। তাকে যদি আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রোডাক্ট সেল করার সাহায্য করে থাকেন। পাশাপাশি সেখান থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন তাহলে অবশ্যই আপনার ইনকাম কিন্তু টাকাগুলো হালাল হবে। আশা করি আপনারা ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন এই প্রশ্নগুলোর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন বিষয়গুলো হালাল সে সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। এরপরেও যদি ফ্রিল্যান্সিং এর হালাল কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে চান তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
বন্ধুগণ আমরা আজকে অনলাইন ইনকাম সম্পর্কিত ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের বিভিন্ন বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি। যেহেতু সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেকটি বিষয় ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের নিজেকেও ডিজিটাল প্লাটফর্মে উন্নীত করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ক্যারিয়ার বানানো উচিত। অনেকেই দেখবেন যারা পূর্বের অবস্থায় অনেক গরীব ছিল শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করে তারা এখন অন্য একটি লেভেলে চলে গেছে। তবে অবশ্যই নিজেকে হালাল রেখে ধৈর্য এবং পরিশ্রমের সাথে ফ্রিল্যান্সিং জগতে কাজ করা উচিত।
আর সেই বিষয়টিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতেই আমরা আজকে এই আর্টিকেলের অভ্যন্তরে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন আপনার ক্যারিয়ার ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে শিফট করা উচিত সে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। পাশাপাশি ইনকামের উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার হয়ে থাকে সেই বিষয়গুলো এ টু জেড আপনাদের মাঝে প্রোভাইড করা হয়েছে। আপনি চাইলে আর্টিকেলের একদম শুরু থেকে আবার পুনরায় পড়ে আসতে পারেন। আপনি যদি অনলাইন থেকে ইনকাম করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং ফ্রিল্যান্সিং সম্বন্ধে আরো তথ্য উপলব্ধি করতে চাচ্ছেন তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url